ছোট গল্প



ফুলজান বুড়ি প্রতি সকালে বাড়ির সামনে ছোট্ট বাগানে কাজ করতেন। গ্রামের সবাই জানত, তার বাগানটিতে নানা রকমের ফুল ফুটে থাকে। সকালে ঘুম থেকে উঠে গ্রামের মানুষজন ফুলজান বুড়ির বাগান দেখতে যেত। ফুলজান বুড়ি হাসি মুখে তাদের ফুলের নাম, রঙ আর গন্ধ সম্পর্কে গল্প শোনাতেন।

একদিন ফুলজান বুড়ি বাগানে কাজ করতে করতে হঠাৎ লক্ষ্য করলেন, তার প্রিয় গোলাপের গাছটি শুকিয়ে যাচ্ছে। বুড়ি খুবই চিন্তিত হয়ে পড়লেন। তিনি অনেক যত্ন করেও গোলাপ গাছটিকে বাঁচাতে পারলেন না। পরের দিন সকালে গ্রামের মানুষ যখন বাগানে এলো, তারা ফুলজান বুড়ির দুঃখের কথা জানতে পারল।

গ্রামের ছোট্ট ছেলে রমজান এগিয়ে এসে বলল, “বুড়ি, আমি নতুন গোলাপ গাছ এনে দেব।” ফুলজান বুড়ি হেসে বললেন, “তোমার নতুন গোলাপ গাছই যদি আমার বাগান রঙিন করে তোলে, তবে আমি তোমাকে অনেক দোয়া করব।” রমজান দৌড়ে চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর, সে হাতে ছোট্ট একটি গোলাপ গাছ নিয়ে ফিরে এল। ফুলজান বুড়ি আনন্দিত হয়ে গাছটি লাগালেন।

দিন যেতে লাগল, নতুন গোলাপ গাছটি বেড়ে উঠল। ফুলজান বুড়ির বাগান আবারও রঙিন হয়ে উঠল। গ্রামের মানুষ আবারও সকালে বাগানে এসে ফুলজান বুড়ির সঙ্গে গল্প করতে শুরু করল। রমজান বুড়ির পাশে বসে থাকত, আর বুড়ি তাকে নানা গল্প শোনাতেন।

একদিন রমজান জানতে চাইল, “বুড়ি, তুমি কেন এত ফুল ভালোবাসো?” ফুলজান বুড়ি মুচকি হেসে বললেন, “ফুলগুলো আমার জীবনের রঙ। যখনই আমি কোনো ফুল দেখি, আমার মনে আনন্দ আসে। আমার মনে হয়, জীবনের প্রতিটি মুহূর্তই একেকটি ফুলের মতো, রঙিন ও সুন্দর।”

রমজান বুড়ির কথা শুনে খুব খুশি হলো। সে প্রতিদিন আরও বেশি করে ফুলজান বুড়ির বাগানে আসতে লাগল। বুড়ির বাগানটিও আরও রঙিন হতে থাকল। গ্রামের মানুষ বুঝতে পারল, ফুলজান বুড়ির বাগান শুধু ফুল দিয়ে নয়, ভালোবাসা আর যত্ন দিয়ে রঙিন হয়েছে।

এভাবেই ফুলজান বুড়ি ও রমজানের বন্ধুত্ব আরও গভীর হলো। ফুলজান বুড়ি রমজানকে তার বাগানের সব গোপন যত্নের কৌশল শিখিয়ে দিলেন। রমজানও ধীরে ধীরে বাগানের কাজে দক্ষ হয়ে উঠল। 

ফুলজান বুড়ি যখন বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে গেলেন, তখন রমজান পুরো বাগানের দায়িত্ব নিল। ফুলজান বুড়ির বাগান রমজানের হাত ধরে আরও রঙিন হয়ে উঠল। গ্রামের মানুষ আজও সেই বাগানে গিয়ে ফুলজান বুড়ির কথা মনে করে, আর রমজানের যত্নে ফুলগুলোও প্রতিদিন নতুন রঙে ফুটে ওঠে।

Post a Comment

Previous Next

نموذج الاتصال